Sunday, December 16, 2012

কী পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য যথেষ্ট?

কী পরিমাণ ঘুম আমাদের জন্য যথেষ্ট?

আমাদের শরীরের সকল কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন। পরিমিত ঘুম না হলে আমরা সকলেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আসলেই আমাদের ঘুমের প্রয়োজন কেন? কি পরিমাণ ঘুম আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপরিহার্য? এসকল প্রশ্ন প্রায়ই আমাদের সকলের মনের মাঝে উঁকি দেয়। এসব নিয়েই আমাদের এ সপ্তাহের আলোচনাঃ
কি পরিমাণ ঘুম জরুরী আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে?
সাধারণভাবে দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে ঘুম থেকে উঠার পর মানসিক প্রফুল্লতা এবং কাজে কর্মতৎপরতা ফিরে পাওয়া যায় কিনা? অনেকেই আছেন যাদের দৈনিক মাত্র ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট, আবার অনেকের প্রয়োজন ৯ ঘণ্টা। এটা আসলে নির্ভর করে ব্যক্তির অভ্যাস এবং প্রতিদিনের পরিশ্রমের উপর।
ঘুম কেন প্রয়োজন?
আসলে কেউই জানেনা ঘুমের প্রয়োজন কেন? সরলভাবে বলা যায় ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং মুক্তভাবে চিন্তার প্রসারতা বাড়ায়। গবেষণায় আরো প্রমাণিত হয়েছে রাতের ঘুম আমাদের স্মৃতি শক্তিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে, আমাদের মস্তিষ্ককে পরবর্তী দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে এবং মস্তিষ্কের রাসায়নিক বস্তুগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগের মাধ্যমে রাসায়নিক বস্তুগুলোর সঠিক মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ক্লান্তি এবং ঘুমের ভাবের মধ্যে পার্থক্য কি?
যদি কোন ব্যক্তি ১০০ বার লাফ দেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে তাহলে সে ব্যক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়বে কিন্তু তার ঘুম আসবেনা। ঘুমের ভাব তখনই আসবে যখন তার ঘুমের ঘাটতি হবে। ক্লান্তি হল শারীরিক পরিশ্রান্তি আর ঘুমের ভাব হল পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবজনিত অবস্থা।
প্রতিদিন কি সবার একই পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন?
না, এটা এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম। শুধুমাত্র “ঘুমের পরিমাণ”-ই নয়, “ঘুমের সময়”-ও এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকম। উদাহরণস্বরূপ অনেকেই রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন এবং প্রত্যুষে উঠতে পছন্দ করেন। আবার বংশগত কারণে অনেকেই রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকতে এবং সকালে দেরী করে উঠতে অভ্যস্ত। অনেকের দীর্ঘক্ষণ ঘুমের প্রয়োজন আবার অনেকের স্বল্প ঘুমই যথেষ্ট।
বয়সের সাথে সাথে কি ঘুমের পরিমান ভিন্ন হতে পারে?
বয়সের সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ সাধারনত বাড়েনা। যারা তরুণ, তারা মনে করে তাদের স্বল্প ঘুমই যথেষ্ট। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা তা না। সবসময়ই তরুণদের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের প্রয়োজন। যদি কারও ঘুমের প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে তার ঘুমের ঘাটতি হয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র “ঘুমের সময়” নয় বরং ঘুম কেমন হচ্ছে সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
পরিমিত ঘুম না হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
পরিমিত ঘুম না হলে প্রথমেই আমাদের স্মৃতি শক্তি ও মনোযোগ ব্যাহত হয়। এছাড়াও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সবকিছুতে বিতৃষ্ণা আসে, কর্ম প্রেরণা হারিয়ে যায়। ইঁদুরের উপর গবেষণা করে প্রমাণিত হয়েছে যে ক্রমাগত ঘুমের অভাব হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। ঘুম আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা অনাক্রম্যতার সাথে বহুলাংশে জড়িত যা শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের শরীরের কিছু রাসায়নিক বস্তু, যেমন- নিউরোট্রান্সমিটার এর অনেক পরিবর্তন হয় পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে। এছাড়াও ঘুমের সময় কিছু হরমোন, যেমন- গ্রোথ হরমোন বা বৃদ্ধিজনিত হরমোন, থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃ্ত হয় যা একই সাথে দৈহিক বৃ্দ্ধি এবং আমাদের মেটাবলিজমে সাহায্য করে। তাই ঘুমের অভাব হলে দৈহিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয় এবং আনুষঙ্গিক আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
কিভাবে ঘুম আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের উপর প্রভাব ফেলে?
পরিবারে যদি কারো ঘুমের সমস্যা থেকে থাকে তবে সেটা পুরো পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। ঘুমের অভাব হলে হতাশা বেড়ে যায়, কাজের প্রেরণা হারিয়ে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং ফলাফলস্বরূপ সবার সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ কমে যায়, ফলে বাইরের কাজের ক্ষেত্রে অন্যের অসুবিধা হয়। আর এরকমভাবে চলতে থাকলে মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে যায় ফলে অনভিপ্রেত ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। জরিপে দেখা যায় যে পশ্চিমা দেশে অধিক হারে ডিভোর্স এর মূল কারণ হল এই ঘুমের সমস্যা। তাই প্রাত্যাহিক জীবনে ঘুমের গুরুত্ব ও প্রভাব অনেক।
যারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তাদের এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে বলে অধিকাংশ গবেষকের মতামত। ঘুমের সমস্যার জন্য চিকিৎসকের নিকট যাওয়া উচিত। এ নিয়ে লজ্জিত হবার কিছুই নেই, বরং যদি ঘুমের সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই ঘুমকে অবহেলার সাথে দেখা উচিত নয়, বরং সঠিক, নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের জন্য আমাদের সকলেরই সচেতন থাকা উচিত।

0 comments:

Post a Comment